কাশ্মীর কিভাবে যাবেন –মাথাপিছু খরচ কত টাকা

 কাশ্মীর কিভাবে যাবেন এবং মাথাপিছু কত টাকা খরচ সে সম্পর্কে জানার জন্য অনেকেই আগ্রহী।  কাশ্মীর ট্যুর কিভাবে করবেন বা  ভ্রমণে কেমন খরচ হবে তা অনেকে জানেন না বিধায় কাশ্মীরে যাওয়ার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যেতে পারেন না। আজকের এই আর্টিকেলে আপনারা কাশ্মীর কিভাবে যাবেন এবং মাথাপিছু কত টাকা খরচ হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করব। অতএব পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিন।

পাহাড়, ঝরনা, মেঘ, লেক, তুষার, বরফ ইত্যাদির সমন্বয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি হল কাশ্মীর। এখানে ছোট বড় প্রায় অর্ধশতাধিক ভ্রমণ স্পট রয়েছে। বছরের প্রায় সব সময়ই কাশ্মীরে  পর্যটকদের সমাগম দেখা যায়। আজকের এই পোষ্টে আমরা কাশ্মীরের সৌন্দর্য ও কাশ্মীরে যেতে মাথাপিছু খরচ সম্পর্কে আলোচনা করব।


কাশ্মীর ভ্রমণের জন্য আপনি কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন

কাশ্মীর ভ্রমণের জন্য কমপক্ষে ছয় থেকে সাত দিন  প্রয়োজন। এই সাত দিনের মধ্যেই আপনি প্রায় পুরো কাশ্মীর মোটামুটিভাবে ঘুরে আসতে  পারবেন। কিভাবে  আপনি এই সাতদিনের মধ্যেই ভ্রমণ পরিকল্পনা করে ফেলবেন, চলুন দেখে নিই।

প্রথম দিন কলকাতা থেকে শ্রীনগর।

দ্বিতীয় দিন শ্রীনগরে এসে রাত্রে হোটেলে থাকবেন।

তৃতীয় দিন শ্রীনগর থেকে গুলমার্গ।

চতুর্থ দিন গুলমার্গ থেকে পেহেলগাম পৌঁছে সেখানে রাত্রিযাপন করতে হবে।

পঞ্চম দিন পেহেলগাম থেকে সোনমার্গ এসে সেখানে রাত্রে অবস্থান করবেন।

ষষ্ঠ দিন আবার সোনমার্গ থেকে চলে আসুন শ্রীনগর।

সপ্তম দিন শ্রীনগর থেকে  চলে আসবেন কলকাতায়।  ব্যাস আমাদের সাত দিনের  ভ্রমণ পরিকল্পনা শেষ। সাতদিনের মধ্যেই আমরা আমাদের ভ্রমণটা  সহজেই সমাপ্ত করতে পারব।


কাশ্মীর ভ্রমণের জন্য খরচ

হোটেল, গাড়ি, থাকা, খাওয়া, ট্রেন ভাড়া সবমিলিয়ে কাশ্মীর ভ্রমণের জন্য মাথাপিছু খরচ হতে পারে আনুমানিক ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। তবে যারা বিমানে যেতে চান তাদের জন্য খরচটা একটু বেশি পড়বে। কিন্তু যারা  ট্রেনে করে কাশ্মীর যাবেন ভাবছেন তাদের জন্য আনুমানিক ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।


কাশ্মীর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

বছরের যে কোন সময় আপনি কাশ্মীর ভ্রমণে  যেতে পারেন। কারণ কাশ্মীরের সৌন্দর্য একেক ঋতুতে একেক রকম। প্রত্যেক ঋতুতে কাশ্মীর তার নতুন নতুন রূপ নিয়ে আবির্ভাব হয়। এই রূপের যেন শেষ নেই। তবে কাশ্মীর ভ্রমণে সবচেয়ে ভালো সময় হলো সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত। এ সময় গেলে আপনারা বরফ পাবেন সেই সাথে পাবেন টিউলিপ ফুলের সমাহার। এই সময়ে আপনারা সাদা তুষার ভরা কাশ্মীর উপভোগ করতে পারবেন। যার সৌন্দর্যের কোন তুলনা হয় না। 


কাশ্মীর কিভাবে যাবেন

কাশ্মীর আপনি দুই ভাবে যেতে পারেন। একটি হল -আকাশপথে আর আরেকটি-রেলপথে।  বিমানে আসতে চাইলে খুব অল্প সময়ে আপনি কাশ্মীর পৌঁছে যাবেন। বিমানে  চড়ে গেলে কলকাতা থেকে সরাসরি শ্রীনগর বিমানবন্দরে নামতে হবে। আপনি যদি বিমানে করে শ্রীনগর যান তাহলে আপনার বিমান ভাড়া আনুমানিক আট থেকে নয় হাজার রুপিয়া লাগতে পারে। তবে সময় বিশেষে ভাড়া কম বেশি হয়ে থাকে। আর ট্রেনে যেতে চাইলে হাওড়া থেকে হিমগিরি অথবা  জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস করে জম্মুতে নেমে বাই রোডে বাসে করে শ্রীনগর আসতে হবে।  আর ট্রেনে গেলে  ভাড়া লাগবে সাতশত থেকে আটশত রুপিয়া। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ থেকে দেড় হাজার টাকা। আশা করি, কিভাবে কাশ্মীর যাবেন তা বুঝাতে পেরেছি।


কাশ্মীরের দর্শনীয় স্থানগুলো কিভাবে ভ্রমণ করবেন

শ্রীনগর পৌঁছে একটি হোটেল নিয়ে নিন। শ্রীনগরের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হল ডাললেক। এই বিস্তীর্ণ  ডাললেক এর আশপাশ জুড়ে শ্রীনগর শহরটি বিস্তার লাভ করেছে।  এখানে থাকার জন্য রয়েছে পানির উপর ভাসমান হাউস বোট। চাইলে হাউস বোটে আপনি রাত্রি কাটাতে পারেন। এছাড়াও ডাললেক শিকারার জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। ৭৫০ টাকার বিনিময়ে আপনি শিকারায়  চেপে ডাললেকের  অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। ২৬ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তীর্ণ এই লেকটি স্বচ্ছতা ও নির্মলতার জন্য অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। গ্রীষ্মকালে এই ডাললেক এলে সমগ্র ডাললেক জুড়ে আপনি প্রচুর চিত্ত বিনোদনের সুযোগ পেয়ে যাবেন।


পরের দিন শ্রীনগর থেকে চলে যাবেন গুলমার্গে। শ্রীনগর থেকে গুলমার্গের দূরত্ব ৫১ কিলোমিটার সড়ক পথ।  এই পথের সৌন্দর্য ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। গুলমার্গে এলে গন্ডোলা রাইডে চড়তে ভুলবেন না। কারণ এখানকার গন্ডোলা রাইডটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। গন্ডোলা রাইড এর দুটি ফেজে বিভক্ত। একটি হলো ফেজ ১ আর অন্যটি হল ফেজ ২। ফেয ১ এর ভাড়া জনপ্রতি ৭৫০ টাকা আর ফেজ ২ এর ভাড়া জনপ্রতি ৯৫০ টাকা।নভেম্বরের শেষে গেলে ফেজ ১ থেকে এক ধাপ উপরে উঠে আপনি বরফ দেখতে পেয়ে যাবেন। আর ফেস ২ তে বছরের প্রায় সব সময় বড় দেখতে পাওয়া যায়।


চতুর্থ দিন গুলমার্গ  থেকে পেহেলগামের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ুন। পেহেলগাম এর দূরত্ব ১৪২ কিলোমিটার। পেহেলগাম এর  পথে যেতে যেতে দেখতে পাবেন কাশ্মীরের বিখ্যাত আপেল বাগান। গুলমার্গ  থেকে পেহেলগামের রাস্তাটা এতই সুন্দর যে আপনি দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। পেহেলগামে পৌঁছানোর পর আপনার মনে হবে আপনি যেন স্বর্গে দাঁড়িয়ে আছেন। চারিদিকে এমন মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য যা দেখলে মনে হয় যেন এখানে প্রকৃতি তার সমস্ত রুপ উজাড় করে ঢেলে দিয়েছে।

পেহেলগাম থেকে কিছুটা দূরে প্রায় ১২ কিলোমিটার গেলে একটি ছোট গ্রাম দেখতে পাবেন। সেই গ্রামটির নাম আরু ভ্যালি। গ্রীষ্মকালে চারিদিকে সবুজ ঘেরা মনোরম দৃশ্য এবং শীতকালে  বরফে ঢাকা চক্ষু শীতল সৌন্দর্যের জন্য এই আরু ভ্যালি স্থানটি বিখ্যাত।


পঞ্চম দিন পেহেলগাম থেকে সোনমার্গের উদ্দেশ্যে রওনা দিন। পেহেলগাম থেকে সোনমার্গের দূরত্ব ১৬৭ কিলোমিটার। অতি দীর্ঘ পথ অতিক্রমের জন্য আপনারা সাথে কিছু শুকনো খাবার রাখতে পারেন। এই পথের অপরূপ সৌন্দর্য আপনার মন ভরিয়ে দিবে। পরের দিন সারাদিন সোনমার্গ এর  চারদিক ঘুরে দেখুন এবং এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করুন। এখানকার প্রকৃতি ধরে রাখতে আপনারা প্রচুর ছবি তুলতে পারেন। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য এতই চমৎকার যে ছবিগুলো অনেক সুন্দর আসে।

ষষ্ঠ দিন সোনমার্গ থেকে আবার শ্রীনগর এর উদ্দেশ্যে রওনা  দিবেন। সপ্তম দিন পুনরায় শ্রীনগর থেকে চলে আসবেন কলকাতা।


শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজকের এই পোস্টে আপনারা কাশ্মীর কিভাবে যাবেন, কোথায় কোথায় ঘুরবেন, মাথাপিছু খরচ  ইত্যাদি সম্পর্কে অল্প পরিসরে জানাতে চেষ্টা করেছি। আশা করি, এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা কাশ্মীর ভ্রমণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনারা চাইলে খুব সহজেই কাশ্মীর ঘুরে আসতে পারেন। বিশেষ করে যারা অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর ভূস্বর্গের মতো এমন চমকপ্রদ ভ্রমণ চাচ্ছেন তাদের জন্য এ পোস্টটি অনেক সহায়ক হবে। এ ধরনের ভ্রমণ সম্পর্কিত তথ্য জানতে আমাদের এই ওয়েব সাইটে চোখ রাখুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url