রংপুর জেলার বিখ্যাত স্থান

রংপুর জেলার বিখ্যাত স্থান সমূহের নাম নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হবে। তাই আপনি যদি রংপুর জেলার বিখ্যাত স্থান সমূহের নাম জেনে নিতে চান, তাহলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। নিচে, রংপুর জেলার বিখ্যাত স্থান সমূহের নাম তুলে ধরা হলো।

পেজ সূচিপত্র: রংপুর জেলার বিখ্যাত স্থান

ভূমিকা

রংপুর জেলার বিখ্যাত স্থান সমূহের তালিকা নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হবে। তাই যদি আপনি মনোযোগ সহকারে নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো পড়েন, তাহলে রংপুর জেলার বিখ্যাত স্থানসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারবেন। তো চলুন দেখে নেয়া যাক,  রংপুর জেলার বিখ্যাত স্থান সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত। 

রংপুর জেলার বিখ্যাত স্থান

ভিন্ন জগত, কারমাইকেল কলেজ, তাজহাট জমিদার বাড়ি সহ রংপুরে আরো অনেকগুলো বিখ্যাত স্থান রয়েছে। সারা বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা রংপুরের এই স্থানগুলো ভ্রমণ করার জন্য ছুটে আসেন।নিচে রংপুর জেলার বিখ্যাত স্থান সমূহের নাম এবং বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো। 
  • কারমাইকেল কলেজ: রংপুরের অন্যতম ও ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো কারমাইকেল কলেজ। ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। এই কলেজটি রংপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। সরকারি এই কলেজটিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন বিভাগে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন একটি কলেজ হওয়ায় অনেকেই এই কলেজটি পরিদর্শন করতে আসেন। চাইলে আপনিও রংপুরের বিখ্যাত কলেজ পরিদর্শন করতে পারেন।
  • তাজহাট রাজবাড়ী: রংপুর শহরের অদূরে তাজহাটে অবস্থিত তাজহাট রাজবাড়ী। ১৮৯০ সালে তাজহাট রাজবাড়ী নির্মাণ করা হয়েছিল। রাজবাড়িটিতে দৃষ্টিনন্দন ও সুন্দর সুন্দর প্রাসাদ রয়েছে এবং একটি বাগান, একটি মন্দির ও একটি পুকুরও রয়েছে। তাজহাট রাজবাড়ীটি মূলত তিনতলা বিশিষ্ট একটি আলিশান রাজপ্রাস। প্রাসাদের ভেতরে রয়েছে সুন্দর কারুকার্য। রাজবাড়ীর বাগানটি খুবই মনোরম। বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও গাছপালা রয়েছে। রাজবাড়ীর মন্দিরটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। সারা বছর বিভিন্ন জায়গা থেকে ভ্রমণ পিপাসু ব্যক্তিগণ তাজহাট জমিদার বাড়ি তুমি করতে আসেন।
  • চিকলি পার্ক: রংপুর শহরের অদূরে অবস্থিত চিকলি পার্ক একটি বিনোদন কেন্দ্র। এই পার্কটিতে একটি সুন্দর লেক, একটি ওয়াটার পার্ক, একটি রেস্টুরেন্ট ও একটি মনোরম মাঠ রয়েছে। লেকের পাড়ে বসে দর্শনার্থীরা মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে পারেন। এছাড়াও ওয়াটার ওয়াটার পার্ক থাকায় দর্শনার্থীরা ওয়াটার পার্কে সময় কাটাতে পারে। অনেকে শুধুমাত্র ওয়াটার পার্কে সময় কাটানোর জন্যই চিকলি পার্কে আসে। জনপ্রিয় এই পার্কটিতে প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী এখানে ঘুরতে আসেন।
  • পায়রাবন্দ: রংপুরের অনতি দূরে অবস্থিত। সারা জাগানো নারী অধিকার কর্মী এবং লেখক বেগম রোকেয়া এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পায়রা বন্ধ গ্রাম বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান হিসেবেই পরিচিত এবং বিখ্যাত। অনেক ভ্রমন পিপাসে লোকজন পায়রা বন্দর গ্রামে ভ্রমণ করতে যান।
  • রংপুর চিড়িয়াখানা: রংপুর চিড়িয়াখানা বাংলাদেশের অন্যতম একটি বৈচিত্র্যময় চিড়িয়াখানা। এটি রংপুর শহর থেকে ২.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চিড়িয়াখানাটিতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বাঘ, সিংহ, হাতি, জিরাফ, ভালুক, হরিণ, সাপ, ইত্যাদি। চিড়িয়াখানাটি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
  • ভিন্নজগত পার্ক: ভিন্নজগত পার্ক বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। এটি রংপুর শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পার্কটিতে বিভিন্ন ধরনের রাইড, গেম, এবং বিনোদনমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ করে ভিন্ন জগতে থাকা "ভিন্ন জগত" দেখার জন্য প্রচুর দর্শনার্থী প্রতিদিন সেখানে ভ্রমণ করতে যান। চাইলে আপনিও সময় সুযোগ বুঝে রংপুরের ভিন্ন জগৎ থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
  • মিঠাপুকুর শালবন: মিঠাপুকুর শালবন বাংলাদেশের রংপুরের অন্যতম একটি প্রাকৃতিক বন। এটি রংপুর শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই বনটিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা এবং প্রাণী রয়েছে। বনে একটি চিড়িয়াখানা রয়েছে যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। আপনি যদি প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখতে ভালোবাসেন তাহলে মিঠাপুকুর শালবন ঘুরে আসতে পারেন আশা করি আপনার ভালো লাগবে।
  • মহিপুর ঘাট: মহিপুর ঘাট রংপুরের মহিপুরে অবস্থিত। রংপুর থেকে মহিপুর ঘাটের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। এই ঘাটটি তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত। ঘাটটি থেকে তিস্তা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। হলে অনেকেই সেই ঘাটে ভ্রমণ করতে পছন্দ করে থাকে।

রংপুর জেলার নামকরণের ইতিহাস

রংপুর জেলার বিখ্যাত স্থান সমূহের নাম ইতোমধ্যেই উপরে তুলে ধরা হয়েছে। নিচে রংপুর জেলার নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হবে। আসুন দেখে নেয়া যাক, রংপুর জেলার নামকরণের ইতিহাস। 

রংপুর নামকরণ কিভাবে হয়েছে সে বিষয়ে সম্পর্কে অনেক মতামত রয়েছে। তবে সব থেকে যে মতামতটি অধিগ্রহণযোগ্য সেটি হল রংপুরের পূর্ব নাম ছিল "রঙ্গপুর"। যেহেতু প্রাচীনকাল থেকেই রংপুরের মাটি ছিল অনেক উর্বর তাই সেখানেই প্রচুর পরিমাণে নীল উৎপন্ন হতো। নীলকে সেই সময়ে "রঙ্গ" হিসেবেই উল্লেখ করা হতো। আর অধিক পরিমাণে নীল উৎপন্ন হওয়ার কারণে সেই অঞ্চলকে "রঙ্গপুর" বলা হতো।
পরবর্তীতে কালের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে "রঙ্গপুর" নামটি "রংপুর" নামে রূপান্তরিত হয়ে যায়। আপনি যদি আগের পত্রিকা কিংবা ম্যাগাজিন দেখে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই সেখানে দেখবেন রংপুরকে "রঙ্গপুর" হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এই হচ্ছে মোটামুটি রংপুরের নামকরণের ইতিহাস

রংপুর জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

রংপুর জেলার বিখ্যাত স্থান সমূহ সম্পর্কে আশা করি বিস্তারিত তথ্য জেনেছেন কেননা উপরে সে বিষয় সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটির এই অংশের রংপুর জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হবে। 

রংপুর জেলার ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকেই সমৃদ্ধ। তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত এই জেলাটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজবংশের অধীনে ছিল। বহু রাজা এই অঞ্চলটি শাসন করেছেন। যদিও রংপুরের প্রাচীন কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। যাই হোক রংপুর সম্পর্কে যে সকল তথ্য পাওয়া যায় সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো। 
  • প্রাচীনকাল: রংপুর জেলার প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে খুব তথ্য পাওয়া যায় না। তবে, ধারণা করা হয় যে, এই অঞ্চলে প্রাচীনকালে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বসবাস করত। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকে এই অঞ্চলটি মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। পরবর্তীতে, এই অঞ্চলটি পাল, সেন, মোগল ও মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল।
  • মধ্যযুগ: মধ্যযুগে, রংপুর জেলাটি পাল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। পাল রাজারা এই অঞ্চলে বেশ কিছু বৌদ্ধ মন্দির ও স্থাপত্য নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীতে, এই অঞ্চলটি সেন সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। সেন রাজারা এই অঞ্চলে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ঐতিহাসিক স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন।
  • মোগল আমল: মুঘল আমলে, রংপুর জেলাটি মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। মুঘল সম্রাট আকবর এই অঞ্চলে বেশ কিছু প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার করেছিলেন। রংপুরের উন্নয়ন প্রকল্পে মোগল সম্রাট বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন।
  • ব্রিটিশ আমল: ব্রিটিশ আমলে, রংপুর জেলাটি ব্রিটিশ ভারতের অধীনে ছিল। ব্রিটিশরা এই অঞ্চলে বেশ কিছু রেলপথ, রাস্তা ও স্থাপত্য নির্মাণ করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে, ভারত বিভাগের পর, রংপুর জেলাটি পূর্ব পাকিস্তানের অধীনে আসে।
  • স্বাধীনতা যুদ্ধ: ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, রংপুর জেলাটি মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, রংপুর জেলা পাকিস্তানি বাহিনী থেকে মুক্তি পায়।
  • স্বাধীনতা পরবর্তীকাল: স্বাধীনতা পরবর্তীকালে, রংপুর জেলাটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এই জেলাটিতে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা ও কৃষিক্ষেত্র রয়েছে। এবং সর্বশেষ রংপুর জেলাকে রংপুর বিভাগ উন্নীত করা হয়। 

শেষ কথা

রংপুর জেলার বিখ্যাত স্থান সম্পর্কিত কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ এই আর্টিকেলটি আশা করি আপনার অনেক ভালো লেগেছে। যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই সকলের সাথে শেয়ার করবেন। আপনি যদি এই আর্টিকেলটি আপনার বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করেন, তাহলে তারাও রংপুরের বিখ্যাত স্থানসমূহ সম্পর্কে জেনে নিতে পারবে। ১৬৪১৩

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url